চট্টগ্রাম খাতুনগঞ্জ বাংলাদেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার । KhantunGanj Chattogram |

แชร์
ฝัง
  • เผยแพร่เมื่อ 8 ต.ค. 2024
  • সত্তর-আশির দশকে চট্টগ্রাম অঞ্চলের একদল শিক্ষিত তরুণ ভাগ্যবদলের অন্বেষণে যুক্ত হন এই খাতুনগঞ্জে। তাদের কেউ এসেছিলেন পেটের দায় মেটাতে চাকরির সন্ধানে, কেউ প্রায় পুঁজিশূন্য হাতে ব্যবসা করতে কিংবা কেউ এসেছিলেন চাকরি ছেড়ে ব্যবসা করার মানসে। ‘খাতুনবিবির’ উর্বর জমিতে নতুন করে জীবনের চাষ শুরু করেছিলেন তারা। চার থেকে পাঁচ দশকের ব্যবধানে সেই তরুণদের মেধা এবং কর্মদক্ষতায় পুরো বাংলাদেশ দেখল খাতুনবিবির আকাশে উজ্জ্বল বাণিজ্যিক সূর্যের উদয়।
    চট্টগ্রামের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, খ্রিস্টীয় অষ্টম ও নবম শতাব্দীতে এখানে আরব বণিকেরা বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে আসতেন। বাদ যাননি পর্তুগিজ, ফরাসি বা তুর্কিরাও। ওই সময় চট্টগ্রামকে বলা হতো ‘গেটওয়ে অব দি ইস্ট।’ সাগরপথে আরব বণিকদের প্রবেশদ্বার ছিল কর্ণফুলী নদী। যে কর্ণফুলীর মোহনায় বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণভোমরা চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান। বন্দর থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার উজানে নদীর তীরবর্তী খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই, আছাদগঞ্জ ও কোরবানীগঞ্জ এলাকায় বাণিজ্যের বিস্তার ঘটে।
    এই এলাকাটিই পরবর্তী সময়ে দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার হিসেবে স্বীকৃতি পায়। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ভোগ্যপণ্য এনে কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে বিক্রি করে বণিকেরা আশাতীত সাফল্য পেতেন। সেই সাফল্যকে পুঁজি করে একাধিক শিল্প গ্রুপ খাতুনগঞ্জের এই বাণিজ্যিক আলোকরশ্মি ছড়িয়ে দেয় সারা দেশে।
    খাতুনগঞ্জ হয়ে ওঠে দেশের একাধিক খ্যাতিমান শিল্প গ্রুপের আতুরঘরও। যে আতুরঘরে জন্ম নেওয়া একাধিক শিল্প গ্রুপ এখন সগৌরবে সারা দেশে আলো ছড়াচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম গ্রুপ এস আলম, কেডিএস, পিএইচপি, টিকে, বিএসএম, জিপিএইচ, পারটেক্স, মেঘনা ও সিটি গ্রুপ।
    এসব খ্যাতনামা শিল্প গ্রুপের পাশাপাশি আরও কয়েক হাজার ব্যবসায়ীর অংশগ্রহণে দুই দশক আগেও খাতুনগঞ্জে রমরমা বাণিজ্যিক কার্যক্রম ছিল। ওই সময় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে ব্রোকার এবং ডিও ব্যবসায়ীদের ভিড়, দরদামের হাঁকডাক ও শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততায় মুখর থাকত চারপাশ। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সেই মুখর বাণিজ্যের সুদিন এখন আর নেই। সরু সড়কে তীব্র যানজট, শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততা, নৌকা কিংবা সাম্পান মাঝিদের ব্যস্ততা যেন ধীরে ধীরে বিদায় নিচ্ছে।
    বিদায় নেওয়ার তালিকায় অনেক আগেই যুক্ত হয়েছিল বাঙালি-অবাঙালি প্রথা। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায় স্বাধীনতা-উত্তরকালের বাঙালি ও অবাঙালি-দুই ধারার বিভক্তরেখা ছিল। ৬০-৭০-এর দশকে অবাঙালি তথা গুজরাট ও মুম্বাইয়ের ব্যবসায়ীদের আমদানির অনুমতি ছিল। তাই তারা ভালো ব্যবসা করতেন। অবাঙালিদের আমদানি করা পণ্য কিনে ব্যবসা করতেন বাঙালিরা।
    ফলে ওই সময় অবাঙালিরা ছিলেন দাপুটে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ঋণপত্র (এলসি) খোলা এবং ৮০-এর দশকে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির পর বাঙালি ব্যবসায়ীরা দ্রুতগতিতে ব্যবসার পরিধি বাড়াতে থাকেন।
    এখানে দোকান-গুদাম ও ব্যবসাসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে অন্তত ছয় হাজার। আর্থিক যোগ বাড়ায় ট্রেড ইউনিয়ন ও ব্যবসায়িক সংগঠন গড়ে ওঠার পাশাপাশি স্থাপিত হয় ব্যাংকসহ নানা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অন্তত ৬০টি শাখা। সঙ্গে যুক্ত হয় ইনস্যুরেন্স কোম্পানির শাখা, ব্রোকারেজ হাউজ ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট। যেসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এখনও মাত্র তিন বর্গকিলোমিটার আয়তনের খাতুনগঞ্জে দৈনিক অন্তত ২৫০ কোটি টাকা লেনদেন হয়।
    ৯০-এর দশকের সোনালি সময় পার করার পর একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকের পর খাতুনগঞ্জের ব্যবসায় ভাটার টান শুরু হয়। একসময় ভোগ্যপণ্যের প্রায় সব পণ্যই খাতুনগঞ্জকেন্দ্রিক থাকলেও এখন দেশের নানা প্রান্তে আরও একাধিক পাইকারি বাজার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে খাতুনগঞ্জ তার আধিপত্য হারিয়েছে। একসময় দেশের চাহিদার অন্তত ৮০ শতাংশ এখান থেকে সরবরাহ হলেও এখন হচ্ছে ৫০-৫৫ শতাংশ।
    যেমন ছিল সোনালি সময়
    বিংশ শতাব্দীর শেষভাগ কিংবা একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেলের বাজারে টিকে, আবুল খায়ের, এমইবি, মোস্তফা, এসএ, এনজিএসসহ ১২টি গ্রুপের প্রতিযোগিতা ছিল চোখে পড়ার মতো। সকাল থেকেই এসব প্রতিষ্ঠানের সামনে ডিওর হাতবদল হতো, ব্রোকারদের জটলা লেগে থাকত। আবার এস আলমসহ অন্য কোম্পানির চিনি, বিএসএম গ্রুপের গম নিয়ে সরগরম থাকত বাজার। এখানে দরবৃদ্ধির উত্তাপের সঙ্গে দরপতনে পিনপতন নীরবতাও থাকত ছায়াসঙ্গী হয়ে। শুধু কি ভোজ্যতেল, গম-চিনি? সঙ্গে ছিল ভোগপণ্যের অন্য অনুষঙ্গগুলোও।
    শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন এনজিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রয়াত ননী গোপাল সাহা, পিএইচপি গ্রুপের চেয়ারম্যান সুফি মিজানুর রহমান, কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ, বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী, টিকে গ্রুপের আবুল কালাম ও আবু তৈয়ব, মোস্তফা গ্রুপের প্রয়াত মোস্তাফিজুর রহমান, এমইবি গ্রুপের প্রয়াত মোহাম্মদ ইলিয়াছ, এসএ গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. শাহাবুদ্দিন আলম এবং বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের হেফাজতুর রহমানের মতো মেবাধী ব্যবসায়ীরা।

ความคิดเห็น • 6