শারদীয়া শুভ দাসগুপ্ত গেরুয়া নদীর পাড় ঘেষে সেই ছোট্ট আমার গ্রাম ছেলেবেলার ছেলেখেলার সেই আনন্দধাম। আকাশ ছিল সুনীল উদার রোদ্দুরে টান টান, গেরুয়া নদীর পাড় ঘেষে সেই ছোট্ট আমার গ্রাম গেরুয়া নদীর পাড় ঘেষে সেই গ্রামের শেষ পাড়া, নবীন কাকার কুমোর বাড়ি, ঠাকুর হত গড়া। সাত পাড়াতে বেজায় খ্যাতি, নবীন তালেবর, নবীন কাকার হাতের ঠাকুর অপূর্ব সুন্দর। এক এক বছর এক এক রকম ঠাকুর তৈরি হতো, সেসব ঠাকুর দেখতে মানুষ বেজায় ভিড় জমাতো। স্কুল পালানো দুপুর ছিলো, ছিলো সঙ্গী সাথী, চোখ জুড়ানো মূর্তি দেখতে ভীষণ মাতামাতি। শারদীয়ার দিন গড়াতো শিউলি গন্ধে দুলে, রোজই যেতাম ঠাকুর গড়া দেখতে সদলবলে। নবীন কাকা গরিব মানুষ, সদাই হাসিমুখে, নিবিষ্ট মন, ব্যস্ত জীবন, আপন ভোলা সুখে। হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হতো লক্ষ্মী, গণেশ, পেঁচা, দূর গাঁয়ে তার ছোট্ট বাড়ি, ঠাকুর গড়েই বাঁচা। সে বছর কি হলো বলি, শোনো দিয়ে মন, বন্যা হলো ভীষণরকম ভাসলো যে জীবন। কত মানুষ ঘর হারালো, প্রাণ হারালো কত, গোটা গ্রামের বুকটি জুড়ে হাজার আঘাত ক্ষত। ধানের জমি পাটের ক্ষেতে জল থৈ থৈ বান, সর্বনাশের কান্না ঘেরা হাজার নিঃস্ব প্রাণ। বর্ষা শেষে বন্যা গেল, জাগলো শারদ আলো, নীল আকাশে পুজোর ছুটি দিব্যি ডাক পাঠালো। কাশফুলেরা উঠল দুলে, শিউলি ঝরা দিন, পুজো আসছে রোদ্দুরে তাই বাজলো খুশির বীণ। নবীন কাকার টালির ঘরে হচ্ছে ঠাকুর গড়া, গেরুয়া নদীর পাড় ঘেঁষে গ্রাম জাগলো খুশির সাড়া। আমরা যত কচিকাঁচা, আবার জড়ো হয়ে, ঠাকুর দেখতে গেলাম ছুটে মাঠ ঘাট পেরিয়ে। সেবার মাত্র গুটিকয়েক ঠাকুর টালির ঘরে, পুজোর আয়োজন তো সেবার নমোনমো করে। তারই মধ্যে একটি ঠাকুর টালির চালের কোনে, নবীন কাকা ভাঙেন, গড়েন নিত্য আপন মনে। অন্য ঠাকুর দেখতে চাইলে বাধা দিতেন না, ওই ঠাকুরটি দেখতে চাইলে না শুধু না। কৌতূহলে দিন গড়ালো পুজো এলো কাছে, মহালয়ার দিন টি এলো পুজোর খুশির সাজে। আমরা কয়জন রাত থাকতে উঠেছি ঘুম ছেড়ে, পুবের আকাশ মলিন, আলো ধীরে উঠছে বেড়ে। অন্ধকারে চুপিসারে গুটিগুটি পায়ে, আমরা হাজির নবীন কাকার ঘরের কিনারায়। চুপ্টি করে দরজা ঠেলে ভিতরে গিয়ে, দেখি কাকা চোখ আঁকছেন সমস্ত মন দিয়ে। চোখ আঁকা যেই সাঙ্গ হল, নিথর নবীন কাকা, অঝোর ধারে কেঁদেই চলেন দুহাতে মুখ ঢাকা। কাঁদছে শিল্পী, নিরব বিশ্ব, কুপির আলো ঘরে, নবীন কাকার পাষাণ হৃদয় কান্না হয়ে ঝরে। রাত ফুরোনো ভোরের আকাশ, কৃপণ অল্প আলো, মুখ দেখলাম সেই ঠাকুরের, প্রাণ জুড়িয়ে গেল। কিন্তু একি? এ মুখ তো নয় দুর্গা বা পার্বতী? এ যেন এক ঘরের মেয়ে, চেনা জানা অতি। নবীন কাকার সামনে গিয়ে কি হয়েছে বলি, কেঁদে বলেন নবীন কাকা সবই জলাঞ্জলি। শ্রাবণ মাসে বন্যা হলো, গেল অনেক কিছু, মারণব্যাধি এলো তখন বানের পিছু পিছু। ভাদ্র মাসের পূর্ণিমাতে সেই ব্যধি যে ধরল, মেয়ে আমার অনেক কষ্টে যন্ত্রনাতে মরল। ঠাকুর গড়ি, দু হাত আমার অবশ হয়ে আসে, সব প্রতিমার মুখ জুড়ে ওই মেয়ের মুখটি ভাসে। দ্যাখ্ না তোরা, দ্যাখ্ না সবাই, চোখ আঁকা শেষ হলো, দ্যাখ্ না এইতো মেয়ে আমার হাসছে ঝলোমলো। কোথায় গেলি মা রে আমার? কোথায় তোকে পাই? মূর্তি গড়ে খুঁজি তোকে মূর্তিতে তুই নাই। ষষ্ঠী এলে বোধন, দেবীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা হবে, জাগবে ঠাকুর, কিন্তু আমার মেয়ে ফিরবে কবে? কেউ কি কোন মন্ত্র জানো মৃন্ময়ী এই মেয়ে, বাবার চোখের জল মোছাতে উঠবে হেসে গেয়ে? আমরা অবাক! মহালয়ায় ভোরের শিউলি ঝরে, কি নিদারুণ ঠাকুর পুজো নবীন কাকার ঘরে!
খুব ভালো লাগলো। ❤❤❤
বাহ চমৎকার অপূর্ব সুন্দর মিস্টি ❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤
প্রজ্ঞা তোমার আবৃত্তি ভীষণ ভীষণ ভালো লাগলো। ❤❤
সুতপা দি
শারদীয়া
শুভ দাসগুপ্ত
গেরুয়া নদীর পাড় ঘেষে সেই ছোট্ট আমার গ্রাম
ছেলেবেলার ছেলেখেলার সেই আনন্দধাম।
আকাশ ছিল সুনীল উদার রোদ্দুরে টান টান,
গেরুয়া নদীর পাড় ঘেষে সেই ছোট্ট আমার গ্রাম
গেরুয়া নদীর পাড় ঘেষে সেই গ্রামের শেষ পাড়া,
নবীন কাকার কুমোর বাড়ি, ঠাকুর হত গড়া।
সাত পাড়াতে বেজায় খ্যাতি, নবীন তালেবর,
নবীন কাকার হাতের ঠাকুর অপূর্ব সুন্দর।
এক এক বছর এক এক রকম ঠাকুর তৈরি হতো,
সেসব ঠাকুর দেখতে মানুষ বেজায় ভিড় জমাতো।
স্কুল পালানো দুপুর ছিলো, ছিলো সঙ্গী সাথী,
চোখ জুড়ানো মূর্তি দেখতে ভীষণ মাতামাতি।
শারদীয়ার দিন গড়াতো শিউলি গন্ধে দুলে,
রোজই যেতাম ঠাকুর গড়া দেখতে সদলবলে।
নবীন কাকা গরিব মানুষ, সদাই হাসিমুখে,
নিবিষ্ট মন, ব্যস্ত জীবন, আপন ভোলা সুখে।
হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হতো লক্ষ্মী, গণেশ, পেঁচা,
দূর গাঁয়ে তার ছোট্ট বাড়ি, ঠাকুর গড়েই বাঁচা।
সে বছর কি হলো বলি, শোনো দিয়ে মন,
বন্যা হলো ভীষণরকম ভাসলো যে জীবন।
কত মানুষ ঘর হারালো, প্রাণ হারালো কত,
গোটা গ্রামের বুকটি জুড়ে হাজার আঘাত ক্ষত।
ধানের জমি পাটের ক্ষেতে জল থৈ থৈ বান,
সর্বনাশের কান্না ঘেরা হাজার নিঃস্ব প্রাণ।
বর্ষা শেষে বন্যা গেল, জাগলো শারদ আলো,
নীল আকাশে পুজোর ছুটি দিব্যি ডাক পাঠালো।
কাশফুলেরা উঠল দুলে, শিউলি ঝরা দিন,
পুজো আসছে রোদ্দুরে তাই বাজলো খুশির বীণ।
নবীন কাকার টালির ঘরে হচ্ছে ঠাকুর গড়া,
গেরুয়া নদীর পাড় ঘেঁষে গ্রাম জাগলো খুশির সাড়া।
আমরা যত কচিকাঁচা, আবার জড়ো হয়ে,
ঠাকুর দেখতে গেলাম ছুটে মাঠ ঘাট পেরিয়ে।
সেবার মাত্র গুটিকয়েক ঠাকুর টালির ঘরে,
পুজোর আয়োজন তো সেবার নমোনমো করে।
তারই মধ্যে একটি ঠাকুর টালির চালের কোনে,
নবীন কাকা ভাঙেন, গড়েন নিত্য আপন মনে।
অন্য ঠাকুর দেখতে চাইলে বাধা দিতেন না,
ওই ঠাকুরটি দেখতে চাইলে না শুধু না।
কৌতূহলে দিন গড়ালো পুজো এলো কাছে,
মহালয়ার দিন টি এলো পুজোর খুশির সাজে।
আমরা কয়জন রাত থাকতে উঠেছি ঘুম ছেড়ে,
পুবের আকাশ মলিন, আলো ধীরে উঠছে বেড়ে।
অন্ধকারে চুপিসারে গুটিগুটি পায়ে,
আমরা হাজির নবীন কাকার ঘরের কিনারায়।
চুপ্টি করে দরজা ঠেলে ভিতরে গিয়ে,
দেখি কাকা চোখ আঁকছেন সমস্ত মন দিয়ে।
চোখ আঁকা যেই সাঙ্গ হল, নিথর নবীন কাকা,
অঝোর ধারে কেঁদেই চলেন দুহাতে মুখ ঢাকা।
কাঁদছে শিল্পী, নিরব বিশ্ব, কুপির আলো ঘরে,
নবীন কাকার পাষাণ হৃদয় কান্না হয়ে ঝরে।
রাত ফুরোনো ভোরের আকাশ, কৃপণ অল্প আলো,
মুখ দেখলাম সেই ঠাকুরের, প্রাণ জুড়িয়ে গেল।
কিন্তু একি? এ মুখ তো নয় দুর্গা বা পার্বতী?
এ যেন এক ঘরের মেয়ে, চেনা জানা অতি।
নবীন কাকার সামনে গিয়ে কি হয়েছে বলি,
কেঁদে বলেন নবীন কাকা সবই জলাঞ্জলি।
শ্রাবণ মাসে বন্যা হলো, গেল অনেক কিছু,
মারণব্যাধি এলো তখন বানের পিছু পিছু।
ভাদ্র মাসের পূর্ণিমাতে সেই ব্যধি যে ধরল,
মেয়ে আমার অনেক কষ্টে যন্ত্রনাতে মরল।
ঠাকুর গড়ি, দু হাত আমার অবশ হয়ে আসে,
সব প্রতিমার মুখ জুড়ে ওই মেয়ের মুখটি ভাসে।
দ্যাখ্ না তোরা, দ্যাখ্ না সবাই, চোখ আঁকা শেষ হলো,
দ্যাখ্ না এইতো মেয়ে আমার হাসছে ঝলোমলো।
কোথায় গেলি মা রে আমার? কোথায় তোকে পাই?
মূর্তি গড়ে খুঁজি তোকে মূর্তিতে তুই নাই।
ষষ্ঠী এলে বোধন, দেবীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা হবে,
জাগবে ঠাকুর, কিন্তু আমার মেয়ে ফিরবে কবে?
কেউ কি কোন মন্ত্র জানো মৃন্ময়ী এই মেয়ে,
বাবার চোখের জল মোছাতে উঠবে হেসে গেয়ে?
আমরা অবাক! মহালয়ায় ভোরের শিউলি ঝরে,
কি নিদারুণ ঠাকুর পুজো নবীন কাকার ঘরে!
th-cam.com/video/_cb2ZmzXbmY/w-d-xo.htmlsi=loZeOjhHKzAkVMgt
Apnar apurba uposthapona chokhe jol ene dilo... Nije ekjon bachik silpi hisabe apnar kach theke onek kichu sikhlam. ❤🙏
Khub sundor
ভাল লাগল। উপস্থাপনা খুবই সুন্দর।
সারদার রূপ নিয়ে শারদীয়ায় প্রজ্ঞা দিদির এ কী অপরূপ উপস্থাপনা!
যেনো স্মৃতিপটে আঁকা
Superb recitation
Heart touching ❤😢
Khub valo laglo.
Khub sundar bandhu holam bandhu hoar amontron roilo plz
Khoob bhalo laglo Prajna.
Khub valo laglo
খুব সুন্দর হয়েছে প্রজ্ঞা.... খুব ভালো লাগলো
খুব ভালো
Darun darun❤❤
খুব সুন্দর উপস্থাপনা। শুভেচ্ছা। শুধু কিছু কিছু 'ড়' 'র' হয়ে গেছে। একটু দেখবেন।
Piou tor kobita sunlam. ❤Ami Mou. Vison vison valo.
👏👏very nice
Opurbo, chokhe jol ene dilo
Opurba opurba.
Pran juriye galo sotty mam apnar voice ta just darun🎉
অপূর্ব
❤❤❤
Darun hoyeche
Exlent
অসাধারণ, মন ছুঁয়ে গেল।
খুব ভালো লাগলো❤বন্ধু হয়ে থেকে গেলাম❤আমি এক ছোট্ট শিল্পী।আমার আবৃত্তি শোনার আমন্ত্রণ রইলো❤
খুব ভালো লাগলো ।
Voice ta khub sundor 😍🥰
অসাধারন.....👌👌👌👌💐
খুব ভালো লাগল
মন ভরে গেল।
Don't forget to SUBSCRIBE and Share
অসাধারণ
বা:।☘️☘️
শুনতে শুনতে মনে হচ্ছে পূজো এসে গেল, বঙশী দাদূ দূর্গা মন্দিরে ঠাকুর গড়ছে, ফিরে পাচ্ছি নিজের ছেলেবেলা।
Khoob valo lagey tor golai ai kobitata
Don't forget to SUBSCRIBE and Share
অসামান্য 😍
খুব ভালো লাগলো।
Khub sundor laglo