হাসান আজিজুল হকের ছোটগল্প 'শকুন'

แชร์
ฝัง
  • เผยแพร่เมื่อ 5 ก.ย. 2024
  • উনবিংশ শতাব্দী থেকে বর্তমান পর্যন্ত খুব কম সাহিত্যিক নিজেদের স্বকীয়ভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন। যে-কয়জন সাফল্যের সাথে সবার দৃষ্টি কেড়েছেন হাসান আজিজুল হক তাদের মধ্যে অন্যতম।
    সাতচল্লিশের দেশ বিভাগের সময় সীমানার কারণে মানুষে মানুষে যে বিরোধ ও দাঙ্গা লেগেছিল তা হাসান আজিজুল হককে ভিন্ন এক মানুষে পরিণত করেছে। দেশবিভাগের বিভীষীকা নিয়ে সাহাদাত হোসেন মান্টোর ছোটগল্প সবার দৃষ্টি কেড়েছে। কারণ, মানবতার মধ্যে যে বিরোধ ও বিভক্তি তা সৃষ্টিকর্তার সার্থকতা নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু দেশ বিভাগের এ বিভীষীকা নিয়ে ’৪৭ পরবর্তী সময়ে পুর্বপাকিস্তান তথা আজকের বাংলাদেশের সাহিত্যিকদের মধ্যে খুব একটা নাড়া দিয়েছে বলা যাবে না। কিন্তু হাসান আজিজুল হক ভিন্ন। ষাটের দশক থেকে আমৃত্যু তিনি দেশ বিভাগের ক্ষত নিয়ে মানুষের বিরোধের বিরুদ্ধে বেদনা অনুভব করেছেন।
    আঞ্চলিক ভাষাকে সবার বোধগম্য করে প্রকৃতজনদের কথা শহুরে মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে হাসান আজিজুল হক হাজারো বছরের পুরানো সংস্কৃতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন পাঠক হৃদয়ে। সাহিত্য মানুষের চিন্তা-চেতনার শৈল্পিক উপজনন-মানুষের স্বকীয় চিন্তাধারা ও কল্পনার মিশেলে যার শিল্পরূপ দিতে পারেন সাহিত্যিক। এই কথাটি একটি মৌলিক স্বরে উচ্চারণ করেছেন হাসান আজিজুল হক: ‘যদি সাহিত্য থেকে কিছু নিতে পারলাম না তাহলে বলতে হয় পৃথিবীতে বাস করলাম প্রায় নরকে বাস করার মতোই। সাহিত্য থেকে কিছু নিতে পারলাম না, শিল্প থেকে নিতে পারলাম না, শুধু জীবনযাপন করে গেলাম, সে-জীবনযাপন গরুও করে, ভেড়াও করে তার সঙ্গে মানুষের তফাৎ কি? আমি সাহিত্যকে সেই চোখে দেখি।’
    তাঁর গল্পে ভাষা-ব্যবহারে ও তাঁর নিজ দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে আমাদের দেশভাগের ক্ষত বা জ্বালামুখ নিঠুর আক্ষয় সারল্যে শিল্পরূপ পেয়েছে, যা আমাদের চিরায়ত সম্পদে পরিণত হয়েছে।
    সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত সমকাল পত্রিকায় তাঁর ‘শকুন’ গল্প প্রকাশিত হয়।
    গল্পটি শুরু করেন এভাবে, “কয়েকটি ছেলে বসে ছিল সন্ধ্যার পর। তেঁতুলগাছটার দিকে পিছন ফিরে। খালি গায়ে ময়লা হাফশার্টকে আসন করে। গোল হয়ে পা ছড়িয়ে গল্প করছিল। একটা আর্তনাদের মত শব্দে সবাই ফিরে তাকাল। তেঁতুলগাছের শুকনো ডাল নাড়িয়ে, পাতা ঝরিয়ে সোঁ সোঁ শব্দে কিছু একটা উড়ে এল মাথার ওপর। … হামেষা দেখা যায় এমন পাখিদের মধ্যে শকুনই তীব্রভাবে মাটিতে নেমে তাল সামলানোর জন্যে খানিকটা দৌড়ে যায়। তাই তার চোখেই প্রথমে পড়ল অন্ধকারের তালটা দৌড়তে দৌড়তে খানিকটা এগিয়ে বিব্রত হতভম্বের মত দাঁড়িয়ে গেল।”
    এখানে দু’টি বিষয় তাৎপর্যপূর্ণ। এক, সন্ধ্যাবেলায় তেঁতুলগাছে ভূত থাকে এবং সে ভূতের আক্রমণে শেষ হতে পারে যে কেউ। এমন বিশ্বাস খুব সাধারণ। লোকবিশ্বাস মতে সন্ধ্যা হলেই পুকুর পাড়ের পুরানো তেঁতুলগাছ থেকে নেমে আসে ভূত। গাঁয়ের দুষ্ট ও নানা-বয়সী ছেলেরা সাধারণত ভয় পায় না। কিন্তু বাতাসে মর্মর শব্দ শুনে ভয় পেল তারা। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হলো। যদিও খানিক পরেই দেখতে পেল বৃদ্ধ শকুন পরে আছে গাছের নিছে। অন্ধকারে চোখে দেখতে পায়নি শকুনটি। তাছাড়া বয়সের ভারেও নড়তে পারেনি।
    লোকসংস্কৃতির মধ্যে লুকিয়ে থাকা কু-সংস্কারকে বিদায়ের উপায় এ গল্পে উঠে এলো সুন্দরভাবে। সবাই ভয় পেলেও স্কুল পড়ুয়া বালক ঠায় দাড়ঁয়ে থেকে বুঝার চেষ্টা করল প্রকৃত রহস্য কি। খানিক পরে বুঝতে পারল বুড়ো শুকুনের উপস্থিতির সাথে বাতাসের মর্মর শব্দ এবং গা থেকে বেরিয়ে আসা দুর্গন্ধ দাড়িঁয়ে থাকতে দিতে চায় না।
    “একটা দমকা বাতাসে অজস্র শুকনো পাতা ঝরে পড়ল। পুকুরের পানিতে প্রথমে মৃদু কম্পন, তারপর ছোট ছোট ঢেউ উঠল- কার হাত থেকে কোথায় ধাতব কিছু পড়ে বিশ্রী অস্বস্তিদায়ক একটা শব্দ হলো।” লোকসাহিত্যে এ শকুন বিশ্বাস ঘাতক ও রক্তচোষা মহাজনদের প্রতীক। মহাজনদের শেষ পরিণতি উঠে এসেছে এখানে। শোষিত বঞ্চিত মানুষের প্রতিনিধি হচ্ছে এসব ছোট ছেলেরা।
    ‘গ্রাম্য নানা কিসিমের বালকেরা মিলেমিশে যা করে- দুষ্টমি হৈহুল্লোড় এসবের কেন্দ্রিয় চরিত্রে থাকে শকুনটি। বালকেরা নানান কথা বলে, মন্তব্য করে। হাসি-তামাশার মধ্যেই আবর্তিত হয় শংকায় ভরা সময়টি। সময় যেতে থাকে, গড়িয়ে বাড়তে থাকে কৌতুহলের পরাকষ্টা। একেবারেই গ্রামের ছেলে-নিরিড় বৃক্ষঘেরা, ঝোঁপভরা নির্জনে ছেলেরা অসহায় শকুনকে তুলনা করে মহাজনদের সাথে।’ হয়তো এ কিশোরদের মাধ্যমেই শ্রেণি ব্যবধানকে উপড়ে ফেলতে চান। তকে কি শোষকেরা শেষ পর্যন্ত লাঞ্চিত হয় শোষিতদেরই উত্তাধিকারে? মানুষের বিজয়কে, তৃণমূল পর্যায়ের ভাবনাবলয়কেই হাসান আজিজুল হক ‘শকুন’ গল্পে বিধৃত করেন মূলত।
    শেষ আকুতিকে চিত্রায়িত করে গল্পকার লিখলেন, “অন্তত মুক্তি পেতে এই অসহনীয় কিশোরদের হাত থেকে, তাদের হিংস্র কৌতুহল আর প্রাণান্ত খেলার খপ্পর থেকে। কিন্তু তার চোখে দৃষ্টি নেই, চলার কোন উদ্দেশ্য নেই। শকুনটার মাথা ঠুকে গেল দেয়ালে। পেছনে পেছনে একদল খুদে শয়তানের মতো প্রতিহিংসাপরায়ণ ছেলের দল নিষ্ঠুর আনন্দে ধাওয়া করেছে। কিন্তু পাখিটা পার হতে পেরেছে অন্ধকার গলিটা। কারণ গলিটা কানাগলি নয়। গলির দুপাশের দেয়ালের ফুটোয় যে সাপগুলো গ্রীষ্মের গরমে গলা বের করে থাকে, যদি তারা সেই অবস্থায় থাকত তাহলে নিশ্চয়ই মাথা আবার গুটিয়ে নিয়েছে।”
    প্রতিরোধের বড় অস্ত্র সাহস। সাহসের সাথে এগিয়ে আসলে শত্রু যত শক্তিশালী হোক না পরাজিত হবেই। হাসান আজিজুল হক এমনটাই মনে করছেন। এমন উদ্দীপনার সময় তিনি আঞ্চলিকতার সংমিশ্রন করে বললেন, “চিৎকার করে কে আর্তনাদ করে উঠল। তার পায়ে শুকনো হাড়ের চোখাদিক ফুটে গিয়েছে। আচ্ছা উ বসে থাকুক, শিকুনিটোকে ধরবুই। চেঁচিয়ে বলে উঠল রফিক। হ্যাঁ, তু বোস, আমরা ওটোকে ধরবুই। নাইলে তু বাড়ি যা।
    পরিণতি সত্যিকার অর্থেই ভয়ানক হলো, কেননা, “শেষ পর্যন্ত সবাই ধরে ফেলল ওকে। আঁকড়ে জাপটে দুমড়ে ধরে ফেলল শকুনটাকে। তারা বুক দিয়ে অনুভব করল হাঁপরের মতো প্যাসফেসে শূন্য শব্দ উঠেছে শকুনটার ভিতর থেকে। দীর্ঘশ্বাসের মতো- ফাঁপা, শূন্য, ধরা-পড়ার।”
    হাসান আজিজুল হক বাংলা সাহিত্যের কথাশিল্পে অনন্য মাত্রা সংযোগ করেছেন পৌরণিক কাহিনী, লোক বিশ্বাস, লোকভাষা ও সমসাময়িক রাজনীতির কুটচালে পিষ্ট মানুষের হাহাকারকে প্রাণবন্তভাবে চিত্রায়নের মাধ্যমে।

ความคิดเห็น • 6

  • @mdkamalhossain6458
    @mdkamalhossain6458 ปีที่แล้ว +1

    গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ❤❤

  • @mdmoshiarrahaman3378
    @mdmoshiarrahaman3378 ปีที่แล้ว +2

    চমৎকার

  • @freenfreshbd9692
    @freenfreshbd9692 ปีที่แล้ว +2

    অনেক ভালো আপনার বিশ্লেষণ।

    • @hasan.arindam
      @hasan.arindam  ปีที่แล้ว

      ধন্যবাদ। শেয়ার করতে পারেন