হুলিয়া||Hulia||Nirmolendu_Gunn||recited_by_Palash||Bangla kobita

แชร์
ฝัง
  • เผยแพร่เมื่อ 5 ก.ย. 2024
  • হুলিয়া
    নির্মলেন্দু গুণ
    আমি যখন বাড়িতে পৌঁছলুম তখন দুপুর,
    আমার চতুর্দিকে চিকচিক করছে রোদ,
    শোঁ শোঁ করছে হাওয়া।
    আমার শরীরের ছায়া ঘুরতে ঘুরতে ছায়াহীন
    একটি রেখায় এসে দাঁড়িয়েছে৷
    কেউ চিনতে পারেনি আমাকে,
    ট্রেনে সিগারেট জ্বালাতে গিয়ে একজনের কাছ থেকে
    আগুন চেয়ে নিয়েছিলুম,একজন মহকুমা স্টেশনে উঠেই
    আমাকে জাপটে ধরতে চেয়েছিল, একজন পেছন থেকে
    কাঁধে হাত রেখে চিত্কার করে উঠেছিল;-আমি সবাইকে
    মানুষের সমিল চেহারার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছি৷
    কেউ চিনতে পারেনি আমাকে,একজন রাজনৈতিক নেতা
    তিনি কমিউনিস্ট ছিলেন,মুখোমুখি বসে দূর থেকে
    বারবার চেয়ে দেখলেন-,কিন্তু চিনতে পারলেন না৷
    বারহাট্টায় নেমেই রফিজের স্টলে চা খেয়েছি,
    অথচ কী আশ্চর্য,পুনর্বার চিনি দিতে এসেও
    রফিজ আমাকে চিনলো না৷
    দীর্ঘ পাঁচ বছর পর পরিবর্তনহীন গ্রামে ফিরছি আমি৷
    সেই একই ভাঙাপথ,একই কালোমাটির আল ধরে
    গ্রামে ফেরা,আমি কতদিন পর গ্রামে ফিরছি৷
    আমি যখন গ্রামে পৌঁছলুম তখন দুপুর,
    আমার চতুর্দিকে চিকচিক করছে রোদ,
    শোঁ-শোঁ করছে হাওয়া৷
    অনেক বদলে গেছে বাড়িটা,
    টিনের চাল থেকে শুরু করে পুকুরের জল,
    ফুলের বাগান থেকে শুরু করে গরুর গোয়াল;
    চিহ্নমাত্র শৈশবের স্মৃতি যেন নেই কোনখানে৷
    পড়ার ঘরের বারান্দায় নুয়ে-পড়া বেলিফুলের গাছ থেকে
    একটি লাউডুগী উত্তপ্ত দুপুরকে তার লক্লকে জিভ দেখালো৷
    স্বতঃস্ফূর্ত মুখের দাড়ির মতো বাড়িটির চতুর্দিকে ঘাস, জঙ্গল,
    গর্ত, আগাছার গাঢ় বন গড়ে উঠেছে অনায়াসে;যেন সবখানেই
    সভ্যতাকে ব্যঙ্গ করে এখানে শাসন করছে গোঁয়ার প্রকৃতি৷
    একটি শেয়াল একটি কুকুরের পাশে শুয়েছিল প্রায়,
    আমাকে দেখেই পালালো একজন,একজন গন্ধ শুঁকে নিয়ে
    আমাকে চিনতে চেষ্টা করলো- যেন পুলিশ-সমেত চেকার
    তেজগাঁয় আমাকে চিনতে চেষ্টা করেছিল৷
    হাঁটতে- হাঁটতে একটি গাছ দেখে থমকে দাঁড়ালাম,
    অশোক গাছ, বাষট্টির ঝড়ে ভেঙ্গে যাওয়া অশোক,
    একসময়ে কী ভীষন ছায়া দিতো এই গাছটা;
    অনায়াসে দু’জন মানুষ মিশে থাকতে পারতো এর ছায়ায়৷
    আমরা ভালোবাসার নামে একদিন সারারাত
    এ-গাছের ছায়ায় লুকিয়ে ছিলুম৷
    সেই বাসন্তী, আহা,সেই বাসন্তী এখন বিহারে,
    ডাকাত স্বামীর ঘরে চার- সন্তানের জননী হয়েছে৷
    পুকুরের জলে শব্দ উঠলো মাছের, আবার জিভ দেখালো সাপ,
    শান্ত-স্থির-বোকা গ্রামকে কাঁপিয়ে দিয়ে
    একটি এরোপ্লেন তখন উড়ে গেলো পশ্চিমে-৷
    আমি বাড়ির পেছন থেকে দরোজায় টোকা দিয়ে
    ডাকলুম, “মা’৷
    বহুদিন যে-দরোজা খোলেনি,
    বহুদিন যে দরোজায় কোন কন্ঠস্বর ছিল না,
    মরচে-পরা সেই দরোজা মুহূর্তেই ক্যাচ্ক্যাচ শব্দ করে খুলে গেলো৷
    বহুদিন চেষ্টা করেও যে গোয়েন্দা-বিভাগ আমাকে ধরতে পারেনি,
    চৈত্রের উত্তপ্ত দুপুরে,অফুরন্ত হাওয়ার ভিতরে সেই আমি
    কত সহজেই একটি আলিঙ্গনের কাছে বন্দী হয়ে গেলুম;
    সেই আমি কত সহজেই মায়ের চোখে চোখ রেখে
    একটি অবুঝ সন্তান হয়ে গেলুম৷
    মা আমাকে ক্রন্দনসিক্ত একটি চুম্বনের মধ্যে
    লুকিয়ে রেখে অনেক জঙ্গলের পথ অতিক্রম করে
    পুকুরের জলে চাল ধুতে গেলেন;আমি ঘরের ভিতরে তাকালুম,
    দেখলুম দু’ঘরের মাঝামাঝি যেখানে সিদ্ধিদাতা গণেশের ছবি ছিল,
    সেখানে লেনিন, বাবার জমা- খরচের পাশে কার্ল মার্কস;
    আলমিরার একটি ভাঙ্গা- কাচের অভাব পূরণ করছে
    ক্রুপস্কায়ার ছেঁড়া ছবি৷
    মা পুকুর থেকে ফিরছেন,সন্ধ্যায় মহকুমা শহর থেকে
    ফিরবেন বাবা,তাঁর পিঠে সংসারের ব্যাগ ঝুলবে তেমনি৷
    সেনবাড়ি থেকে খবর পেয়ে বৌদি আসবেন,
    পুনর্বার বিয়ে করতে অনুরোধ করবেন আমাকে৷
    খবর পেয়ে যশমাধব থেকে আসবে ন্যাপকর্মী ইয়াসিন,
    তিন মাইল বিষ্টির পথ হেঁটে রসুলপুর থেকে আসবে আদিত্য৷
    রাত্রে মারাত্মক অস্ত্র হাতে নিয়ে আমতলা থেকে আসবে আব্বাস৷
    ওরা প্রত্যেকেই জিজ্ঞেস করবে ঢাকার খবর:
    - আমাদের ভবিষ্যত্ কী?
    - আইয়ুব খান এখন কোথায়?
    - শেখ মুজিব কি ভুল করেছেন?
    - আমার নামে কতদিন আর এরকম হুলিয়া ঝুলবে?
    আমি কিছুই বলবো না৷
    আমার মুখের দিকে চেয়ে থাকা সারি সারি চোখের ভিতরে
    বাংলার বিভিন্ন ভবিষ্য়্ত্কে চেয়ে চেয়ে দেখবো৷
    উত্কন্ঠিত চোখে চোখে নামবে কালো অন্ধকার,আমি চিত্কার করে
    কন্ঠ থেকে অক্ষম বাসনার জ্বালা মুছে নিয়ে বলবো:
    ‘আমি এসবের কিছুই জানি না,
    আমি এসবের কিছুই বুঝি না৷’

ความคิดเห็น • 2