ড. মুহাম্মদ ইউনূস | Who is Dr. Muhammad Yunus | Biography

แชร์
ฝัง
  • เผยแพร่เมื่อ 10 ก.พ. 2025
  • ড. মুহাম্মদ ইউনূস হলেন একজন বিশিষ্ট বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ ও সামাজিক উদ্যোক্তা, যিনি ক্ষুদ্রঋণ এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত। তিনি ১৯৪০ সালের ২৮ জুন বাংলাদেশের চট্টগ্রামের একটি ছোট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ড. ইউনূসের পিতা একজন সোনার ব্যবসায়ী ছিলেন এবং মা ছিলেন একজন গৃহিণী। তার প্রাথমিক শিক্ষা চট্টগ্রামেই শুরু হয় এবং তিনি পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
    প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা
    ড. ইউনূসের শিক্ষাজীবন শুরু হয় চট্টগ্রামের লামাবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে তিনি মেধাবী ছাত্র ছিলেন এবং তার একাডেমিক কৃতিত্ব তাকে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রণোদিত করে। ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক এবং ১৯৬৩ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি ফুলব্রাইট বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করার জন্য পাড়ি জমান। ১৯৬৯ সালে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে তার ক্যারিয়ার শুরু করেন।
    পেশাগত জীবন
    পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের পর ড. ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রে টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতির শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। তার শিক্ষাদানের সময়কালীন অভিজ্ঞতা এবং দেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতি তাকে সমাজের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কিছু করার অনুপ্রেরণা জোগায়।
    গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা
    ১৯৭৬ সালে ড. ইউনূস যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছিলেন, তখন তিনি উপলব্ধি করেন যে সাধারণ ব্যাংকিং ব্যবস্থা দরিদ্র মানুষের জন্য কোন কাজ করছে না। এই উপলব্ধি থেকে তিনি ক্ষুদ্রঋণ প্রবর্তনের ধারণা করেন, যা দরিদ্র মানুষকে স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করে তাদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়। তিনি প্রথমে ৪২ জন দরিদ্র মানুষকে ঋণ প্রদান করেন যার পরিমাণ ছিল মাত্র ২৭ ডলার। এই উদ্যোগের সাফল্যের পর তিনি ১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন।
    গ্রামীণ ব্যাংকের মূলনীতি ছিল ঋণের জন্য জামানত দরকার নেই এবং ঋণের শর্তাবলী ছিল সহজ ও সুবিধাজনক। এই ব্যাংকিং মডেল দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুকরণীয় হয়ে ওঠে। গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে ড. ইউনূস লক্ষ লক্ষ দরিদ্র মানুষের জীবন পরিবর্তন করতে সক্ষম হন এবং তাদের আত্মনির্ভরশীল করতে সহায়তা করেন।
    আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও পুরস্কার
    ড. ইউনূসের এই উদ্ভাবনী উদ্যোগ এবং দরিদ্রতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তার অসামান্য অবদান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করে। ২০০৬ সালে তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের সাথে যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। নোবেল কমিটি তার ক্ষুদ্রঋণ প্রবর্তনের জন্য এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়নে তার ভূমিকার জন্য তাকে এই পুরস্কারে ভূষিত করে।
    ড. ইউনূস আরও অনেক আন্তর্জাতিক সম্মাননা ও পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
    প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম (২০০৯)
    কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল (২০১০)
    সিয়াটল বিজনেস ম্যাগাজিনের সোশ্যাল এন্টারপ্রেনিউর অব দ্য ইয়ার
    সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড
    সামাজিক ব্যবসা ও অন্যান্য উদ্যোগ
    ড. ইউনূসের কাজ ক্ষুদ্রঋণের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি সামাজিক ব্যবসার ধারণা প্রবর্তন করেন, যা লাভের উদ্দেশ্যে নয় বরং সামাজিক সমস্যার সমাধানের জন্য গঠিত হয়। তার এই ধারণা বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং অনেক সামাজিক ব্যবসায়ী তার মডেল অনুসরণ করে কাজ শুরু করেন।
    ড. ইউনূসের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন সামাজিক ব্যবসার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ শক্তি, এবং গ্রামীণ কল্যাণ। এই সব উদ্যোগ বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
    সমালোচনা ও বিতর্ক
    যদিও ড. ইউনূসের কাজ আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে, তবুও তিনি বিতর্ক ও সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন। বিশেষ করে ২০১১ সালে বাংলাদেশ সরকার তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে এবং তাকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ থেকে অপসারণ করে। এই ঘটনা নিয়ে দেশে ও বিদেশে ব্যাপক বিতর্ক ও সমালোচনা হয়।
    ব্যক্তিগত জীবন
    ড. ইউনূস ব্যক্তিগত জীবনে খুবই সরল ও সাধারণ মানুষ। তার স্ত্রী আফরোজী ইউনূস এবং একমাত্র কন্যা মোনীকা ইউনূস, যিনি একজন সফল অপেরা গায়িকা। ড. ইউনূসের জীবনের বেশিরভাগ সময়ই তিনি তার কাজ এবং সমাজসেবায় নিবেদিত করেছেন।
    ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, যিনি তার উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা এবং সমাজের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে তার নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি লাভ করেছেন। তার কাজ ও দর্শন বিশ্বের অনেক দেশে দরিদ্রতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে এবং তিনি এখনও সমাজের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। তার জীবনের প্রতিটি অধ্যায় আমাদের জন্য শিক্ষণীয় এবং অনুকরণীয়।

ความคิดเห็น •