গান, অভিনয় ও নির্দেশনা: গৌতম হালদার
অভিনয়ে: গৌতম হালদার, দ্যুতি ঘোষ হালদার, পার্থিব রায়, স্পন্দন ব্যানার্জি।
মূল নাটক: এভাল্ড ফ্লিসার
অনুবাদ: রতন কুমার দাস
সঙ্গীত: নীলাঞ্জন নন্দী
পোশাক: দ্যুতি ঘোষ হালদার
আলোক প্রক্ষেপণ: দেবাশীষ চক্রবর্তী
রূপসজ্জা: সমীর ঘোষ ও পিঙ্কি বিশ্বাস
দুসরা
সংক্ষিপ্তসার
নয়ে নাটুয়া প্রযোজিত দুসরা, এভাল্ড ফ্লিসার বিরচিত ‘দ্য নিম্ফ ডাইস’ অবলম্বনে একটি বাঙলা নাটক। নাটকটির রূপান্তর করেছেন রতন কুমার দাস। ‘দ্য নিম্ফ ডাইস’ একটি অদ্ভুত নাটক যা আমাদের স্বর্গীয় কল্পনামদির ভালোবাসা সম্পর্কে সংবেদনশীল অলীক ধারণা কে ব্যঙ্গ করে। হাস্যরস এবং ব্যাঙ্গে পরিপূর্ণ এই নাটকটি কৌতুকপ্রদ ঘটনার মাধ্যমে আমাদের নিয়ে যায় সর্বকালের ও সর্বস্থানের পুরুষ ও নারীর আদর্শ ভালোবাসা, সম্পর্ক এবং তার ফলস্বরূপ সুখ ও দুঃখের চিরকালীন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে। কোন কোন জায়গায় এই নাটকটির মিল পাওয়া যায় মহাকাব্য রামায়ণ এর কিছু চরিত্রের সাথে এবং এর সূত্রধর হিসেবে দাঁড়ায় বাল্মীকি।
গল্পের শুরুতে দেখা যায় এক জোড়া কম বয়েসি, সদ্য বিবাহিত স্বামী- স্ত্রী, যারা তাদের দাম্পত্য এবং জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট। শুধু তাদের বৈবাহিক জীবনে একটাই দুঃখ যে তারা কোনদিন মধুচন্দ্রিমায় যায়নি; যার কারণ সেই পুরুষটির বস যিনি তাদের এই ইচ্ছে কে মূল্য দেননা। হঠাৎই সেই সুযোগ তাদের কাছে আসে যখন পুরুষটি কিছু বছরের জন্য কর্মসূত্রে দণ্ডকারণ্যে স্থানান্তরিত হয় তার বস এর সঙ্গে। দম্পতি উৎফুল্ল হয় কারণ তারা এখন তাদের আকাঙ্ক্ষিত হানিমুন স্বচ্ছন্দে কাটাতে পারবে।
এরপর তারা অজানা, বন্ধ্যা এক জায়গায় বসবাস শুরু করে এবং ক্রমশ সেখানে বনবাসের মত আটকা পড়ে যায়। সময়ের সাথে তারা বোঝে তাদের বৈবাহিক সম্পর্কে ভালোবাসার কমতি ঘটছে। তাদের অতি ঘনিষ্ঠতা এবং পরিচিতি জন্ম দেয় তিক্ততার। তাদের মনে হয়ে ভগবান বড়ই নির্দয় কারণ তিনি সৃষ্টি করেছেন কামনা ও বাসনা। এর ফলে দৈনন্দিন জীবনের প্রতি আসক্তি হারিয়ে তারা চাইতে থাকে যা তারা হতে পারত আর আশ্রয় নেয় এক বানানো কাল্পনিক বাস্তবতার মধ্যে। এভাবেই তারা উদ্ধার পেতে চায় এই ক্লান্তিকর একাকীত্ব থেকে। নারীটি মনের কল্পনায় একটি সোনার হরিণ দেখতে পায় এবং পুরুষটি কে সেটা নিয়ে আসার জন্য অনুনয় করে। অবাক হয়ে পুরুষটি একটি ফন্দী বানায়। বস এর পরামর্শ নিয়ে সে একটি শিল্পীর ছদ্মবেশ ধারণ করে নারীটির সামনে যায়। সে সোনার হরিণের চিত্র বানায় এবং নারীটির সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়ায়। এই ঘটনায় আনন্দের সাথে সাথে তাদের মনের মধ্যে রোপিত হয় সন্দেহের জঘন্যতম বীজ। ঘটনা আরও খারাপের দিকে যেতে থাকে এবং এই সময়ে সেই বস তাদের জীবনে ঢোকে একজন রক্ষাকর্তা এবং একজন অনুপ্রবেশকারী হিসেবে। এই বস এক ছেলেমানুষি খেলার জালে জড়িয়ে তাদের নানা উপায় অবলম্বন করার পরামর্শ দেয় ব্যক্তিগত তিক্ততা ও একঘেয়েমি কাটাতে। সেইভাবেই এই দম্পতিও খেলতে থাকে এটা ভালোভাবে জানার পরেও যে তারা বুদ্ধিহীনের মত কাজ করছে এবং এতে আদৌ তাদের কোন আনন্দ হবেনা।
তাদের সম্পর্কের এমন এক জটিল এবং অদ্ভুত সন্ধিক্ষণে এসে পুরুষটি বুঝতে শুরু করে যে তার বসের সঙ্গে তার স্ত্রীর কোন গোপন সম্পর্ক আছে। এই সন্দেহ যত বাড়তে থাকে পুরুষটি বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর করতে থাকে এবং কিছু ক্ষীণ সত্য খুঁজে পায়; যা তার সন্দেহ এবং হতাশা আরও বাড়িয়ে দেয়। এই সত্য, যা শুধু তার কল্পনা, তাকে প্রমাণ করার জন্য পুরুষটি মরিয়া হয়ে ওঠে। স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে বিবাদ যখন অভাবনীয় এবং হাস্যকর মোড় নেয়, ঠিক তখনই পুরুষটির বস শ্রীলঙ্কা যাওয়ার পথে প্লেন ক্র্যাশের সম্মুখীন হয় এবং অলৌকিক ভাবে বেঁচে যায়। দুর্ঘটনার পর সে তার পুরনো স্মৃতি হারিয়ে ফেলে।
একদিকে পুরুষটি তার নিজের ধারণা করা সত্যের পিছনে ছুটতে থাকে এবং তার বস তার হারানো স্মৃতি নিয়ে সবকিছু থেকে পালাতে থাকে।
এই ঘটনাপ্রবাহগুলি এমন এক জায়গায় পৌছায় যেখানে নাটকটি শেষ হয়েও শেষ হয়না। শেষে নারীটি সামনে আসে এবং নিজস্ব সত্য প্রকাশ করে। চিরকালের প্রমাণিত সত্যটি বেরিয়ে আসে নারীর শেষ জবানবন্দীর সাথে যেখানে সে স্বীকার করে যে ঘটনাগুলিকে সে তার ইচ্ছানুসারে চালিয়েছে এটা প্রমাণ করতে যে একটি নারী তার বৈবাহিক সম্পর্কে মানসিকভাবে বদ্ধ নয়। সে এটাও স্বীকার করে যে দুই পুরুষই তার প্রতি ভালো আচরণ করেছে এবং সে তাদের দুজনেরই বন্ধুত্বে সম্পূর্ণ বোধ করে। অবশেষে সত্যিকারের ভালোবাসার গান গাওয়া হয় এবং সন্দেহের কুয়াশা সরে গিয়ে জায়গা হয় আনন্দ ও মিলনের। তারা হাত ধরে গাইতে থাকে সুখী জীবনের গান।
নাটকটি শেষ হয় এই শিক্ষার সাথে যে প্রেম- যদিও রোমাঞ্চকর, অলীক ও ধ্বংসাত্মক তবুও অবিনশ্বর।