Apurba.God gifted voice.Express beautifully mam.Rabi Thakur k pronam.Ato sunde j gaya kata diye cha.Mohito hoya jata hoya.Apni aro onek din dura amader anek kabita upahar diin atai God r kacha prathama kori.Apni dirghojibi hone.
ত্রিলোকেশ্বরের মন্দির। লোকে বলে স্বয়ং বিশ্বকর্মা তার ভিত-পত্তন করেছিলেন কোন্ মান্ধাতার আমলে, স্বয়ং হনুমান এনেছিলেন তার পাথর বহন করে। ইতিহাসের পণ্ডিত বলেন, এ মন্দির কিরাত জাতের গড়া, এ দেবতা কিরাতের। একদা যখন ক্ষত্রিয় রাজা জয় করলেন দেশ দেউলের আঙিনা পূজারিদের রক্তে গেল ভেসে, দেবতা রক্ষা পেলেন নতুন নামে নতুন পূজাবিধির আড়ালে- হাজার বৎসরের প্রাচীন ভক্তিধারার স্রোত গেল ফিরে। কিরাত আজ অস্পৃশ্য, এ মন্দিরে তার প্রবেশপথ লুপ্ত। কিরাত থাকে সমাজের বাইরে, নদীর পূর্বপারে তার পাড়া। সে ভক্ত, আজ তার মন্দির নেই, তার গান আছে। নিপুণ তার হাত, অভ্রান্ত তার দৃষ্টি। সে জানে কী করে পাথরের উপর পাথর বাঁধে, কী করে পিতলের উপর রুপোর ফুল তোলা যায় - কৃষ্ণশিলায় মূর্তি গড়বার ছন্দটা কী। রাজশাসন তার নয়, অস্ত্র তার নিয়েছে কেড়ে, বেশে বাসে ব্যবহারে সম্মানের চিহ্ন হতে সে বর্জিত, বঞ্চিত সে পুঁথির বিদ্যায়। ত্রিলোকেশ্বর মন্দিরের স্বর্ণচূড়া পশ্চিম দিগন্তে যায় দেখা, চিনতে পারে নিজেদেরই মনের আকল্প, বহু দূরের থেকে প্রণাম করে। কার্তিক পূর্ণিমা, পূজার উৎসব। মঞ্চের উপরে বাজছে বাঁশি মৃদঙ্গ করতাল, মাঠ জুড়ে কানাতের পর কানাত, মাঝে মাঝে উঠেছে ধ্বজা। পথের দুই ধারে ব্যাপারীদের পসরা - পুনশ্চ তামার পাত্র, রুপোর অলংকার, দেবমূর্তির পট, রেশমের কাপড়; ছেলেদের খেলার জন্যে কাঠের ডমরু, মাটির পুতুল, পাতার বাঁশি; অর্ঘ্যের উপকরণ, ফল মালা ধূপ বাতি, ঘড়া ঘড়া তীর্থবারি। বাজিকর তারস্বরে প্রলাপবাক্যে দেখাচ্ছে বাজি, কথক পড়ছে রামায়ণকথা। উজ্জ্বলবেশে সশস্ত্র প্রহরী ঘুরে বেড়ায় ঘোড়ায় চড়ে; রাজ-অমাত্য হাতির উপর হাওদায়, সম্মুখে বেজে চলেছে শিঙা। কিংখাবে ঢাকা পাল্কিতে ধনীঘরের গৃহিণী, আগে পিছে কিংকরের দল। সন্ন্যাসীর ভিড় পঞ্চবটের তলায় - নগ্ন, জটাধারী, ছাইমাখা; মেয়েরা পায়ের কাছে ভোগ রেখে যায় - ফল, দুধ, মিষ্টান্ন, ঘি, আতপতণ্ডুল। থেকে থেকে আকাশে উঠছে চীৎকারধ্বনি ‘জয় ত্রিলোকেশ্বরের জয়'। কাল আসবে শুভলগ্নে রাজার প্রথম পূজা, স্বয়ং আসবেন মহারাজা রাজহস্তীতে চড়ে। তাঁর আগমন-পথের দুই ধারে সারি সারি কলার গাছে ফুলের মালা, মঙ্গলঘটে আম্রপল্লব। আর ক্ষণে ক্ষণে পথের ধুলায় সেচন করছে গন্ধবারি। শুক্লত্রয়োদশীর রাত। মন্দিরে প্রথম প্রহরের শঙ্খ ঘণ্টা ভেরী পটহ থেমেছে। আজ চাঁদের উপরে একটা ঘোলা আবরণ, জ্যোৎস্না আজ ঝাপসা - যেন মূর্ছার ঘোর লাগল। বাতাস রুদ্ধ - ধোঁয়া জমে আছে আকাশে, গাছপালাগুলো যেন শঙ্কায় আড়ষ্ট। কুকুর অকারণে আর্তনাদ করছে, ঘোড়াগুলো কান খাড়া করে উঠছে ডেকে কোন্ অলক্ষ্যের দিকে তাকিয়ে। হঠাৎ গম্ভীর ভীষণ শব্দ শোনা গেল মাটির নীচে - পাতালে দানবেরা যেন রণদামামা বাজিয়ে দিলে - গুরু-গুরু গুরু-গুরু। মন্দিরে শঙ্খ ঘণ্টা বাজতে লাগল প্রবল শব্দে। হাতি বাঁধা ছিল, তারা বন্ধন ছিঁড়ে গর্জন করতে করতে ছুটল চার দিকে যেন ঘূর্ণি-ঝড়ের মেঘ। তুফান উঠল মাটিতে - ছুটল উট মহিষ গোরু ছাগল ভেড়া ঊর্ধ্বশ্বাসে পালে পালে। হাজার হাজার দিশাহারা লোক আর্তস্বরে ছুটে বেড়ায় - চোখে তাদের ধাঁধা লাগে, আত্মপরের ভেদ হারিয়ে কে কাকে দেয় দ'লে। মাটি ফেটে ফেটে ওঠে ধোঁয়া, ওঠে গরম জল - ভীম-সরোবরের দিঘি বালির নীচে গেল শুষে। মন্দিরের চূড়ায় বাঁধা বড়ো ঘণ্টা দুলতে দুলতে বাজতে লাগল ঢং ঢং। আচম্কা ধ্বনি থামল একটা ভেঙে-পড়ার শব্দে। পৃথিবী যখন স্তব্ধ হল পূর্ণপ্রায় চাঁদ তখন হেলেছে পশ্চিমের দিকে। আকাশে উঠছে জ্বলে-ওঠা কানাতগুলোর ধোঁয়ার কুণ্ডলী, জ্যোৎস্নাকে যেন অজগর সাপে জড়িয়েছে। পরদিন আত্মীয়দের বিলাপে দিগ্বিদিক যখন শোকার্ত তখন রাজসৈনিকদল মন্দির ঘিরে দাঁড়ালো, পাছে অশুচিতার কারণ ঘটে। রাজমন্ত্রী এল, দৈবজ্ঞ এল, স্মার্ত পণ্ডিত এল। দেখলে বাহিরের প্রাচীর ধূলিসাৎ। দেবতার বেদীর উপরের ছাদ পড়েছে ভেঙে। পণ্ডিত বললে, সংস্কার করা চাই আগামী পূর্ণিমার পূর্বেই, নইলে দেবতা পরিহার করবেন তাঁর মূর্তিকে। রাজা বললেন, ‘সংস্কার করো। ' মন্ত্রী বললেন, ‘ওই কিরাতরা ছাড়া কে করবে পাথরের কাজ। ওদের দৃষ্টিকলুষ থেকে দেবতাকে রক্ষা করব কী উপায়ে, কী হবে মন্দিরসংস্কারে যদি মলিন হয় দেবতার অঙ্গমহিমা। ' কিরাতদলপতি মাধবকে রাজা আনলেন ডেকে। বৃদ্ধ মাধব, শুক্লকেশের উপর নির্মল সাদা চাদর জড়ানো - পরিধানে পীতধড়া, তাম্রবর্ণ দেহ কটি পর্যন্ত অনাবৃত, দুই চক্ষু সকরুণ নম্রতায় পূর্ণ। সাবধানে রাজার পায়ের কাছে রাখলে একমুঠো কুন্দফুল, প্রণাম করলে স্পর্শ বাঁচিয়ে। রাজা বললেন, ‘তোমরা না হলে দেবালয়-সংস্কার হয় না। ' ‘ আমাদের ‘পরে দেবতার ওই কৃপা' এই ব'লে দেবতার উদ্দেশে মাধব প্রণাম জানালে। নৃপতি নৃসিংহরায় বললেন, ‘চোখ বেঁধে কাজ করা চাই, দেবমূর্তির উপর দৃষ্টি না পড়ে। পারবে?' মাধব বললে, ‘অন্তরের দৃষ্টি দিয়ে কাজ করিয়ে নেবেন অন্তর্যামী। যতক্ষণ কাজ চলবে, চোখ খুলব না। ' বাহিরে কাজ করে কিরাতের দল, মন্দিরের ভিতরে কাজ করে মাধব, তার দুই চক্ষু পাকে পাকে কালো কাপড়ে বাঁধা। দিনরাত সে মন্দিরের বাহিরে যায় না - ধ্যান করে, গান গায়, আর তার আঙুল চলতে থাকে। মন্ত্রী এসে বলে, ‘ত্বরা করো, ত্বরা করো - বাতাস রুদ্ধ - ধোঁয়া জমে আছে আকাশে, গাছপালাগুলো যেন শঙ্কায় আড়ষ্ট অমাবস্যা পার হয়ে শুক্লপক্ষ এল আবার। অন্ধ মাধব আঙুলের স্পর্শ দিয়ে পাথরের সঙ্গে কথা কয়, পাথর তার সাড়া দিতে থাকে। কাছে দাঁড়িয়ে থাকে প্রহরী। পাছে মাধব চোখের বাঁধন খোলে। পণ্ডিত এসে বললে, ‘একাদশীর রাত্রে প্রথম পূজার শুভক্ষণ। কাজ কি শেষ হবে তার পূর্বে। ' মাধব প্রণাম করে বললে, ‘আমি কে যে উত্তর দেব। কৃপা যখন হবে সংবাদ পাঠাব যথাসময়ে, তার আগে এলে ব্যাঘাত হবে, বিলম্ব ঘটবে। ' ষষ্ঠী গেল, সপ্তমী পেরোল - মন্দিরের দ্বার দিয়ে চাঁদের আলো এসে পড়ে মাধবের শুক্লকেশে। সূর্য অস্ত গেল। পাণ্ডুর আকাশে একাদশীর চাঁদ। মাধব দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললে, ‘যাও প্রহরী, সংবাদ দিয়ে এসো গে মাধবের কাজ শেষ হল আজ। লগ্ন যেন বয়ে না যায়। ' প্রহরী গেল। মাধব খুলে ফেললে চোখের বন্ধন। মুক্ত দ্বার দিয়ে পড়েছে একাদশী-চাঁদের পূর্ণ আলো দেবমূর্তির উপরে। মাধব হাঁটু গেড়ে বসল দুই হাত জোড় করে, একদৃষ্টে চেয়ে রইল দেবতার মুখে, দুই চোখে বইল জলের ধারা। আজ হাজার বছরের ক্ষুধিত দেখা দেবতার সঙ্গে ভক্তের। রাজা প্রবেশ করলেন মন্দিরে। তখন মাধবের মাথা নত বেদীমূলে। রাজার তলোয়ারে মুহূর্তে ছিন্ন হল সেই মাথা। দেবতার পায়ে এই প্রথম পূজা, এই শেষ প্রণাম।
'প্রথম পূজা'-পুনশ্চ কাব্যগ্রন্থের শ্রেষ্ঠ সম্পদ...
কত প্রাসঙ্গিক।সকল শিশুই এই কাহিনী র শিকার। সফল অভিনয়।
💰💰💰💰💰💰💰💰💰💰💰💰all for you this are gold
🥳
Osadharon❤❤❤❤❤
অসাধারণ, অপূর্ব
আরও অনেক দিন থাকতে হবে, আর একটা ব্রততী আসবে না।
Divine presentation.
অসাধারণ
Apurba.God gifted voice.Express beautifully mam.Rabi Thakur k pronam.Ato sunde j gaya kata diye cha.Mohito hoya jata hoya.Apni aro onek din dura amader anek kabita upahar diin atai God r kacha prathama kori.Apni dirghojibi hone.
Acha eii kobiter niche english ghulo ki kore apni banalen kindly ektu bolben
অসাধারণ।
দিদি ভাই বলার ভাষা নেই। কবিতা টা আমিও বলার চেষ্টা করেছি। দেখে একটু মতামত জানালে কতজ্ঞ থাকব। 🙏🙏
সর্বাঙ্গ সুন্দর একটি পরিবেশনা, কোনো ভাষা নেই বলার জন্য
Excellent
th-cam.com/video/Zeh1JBq-I74/w-d-xo.html
th-cam.com/video/BmnpIvOYq0U/w-d-xo.html Amar prochesta
Amazing story...
Asadharon... mugdhotay vore gelo Mon...
Darun😍😍😍😍😍😍😍😍😍😍😍😍😍😍😍😍😍😍
অনবদ্য...!!!!।দিদি..!!!_নয়ন বসু ৯৬৭৪০৩১০২৫
অনবদ্য...!!!!।দিদি..!!!_নয়ন বসু ৯৬৭৪০৩১০২৫
Proud of u
খুব ভালো লাগলো দিদি ....
Wow,,,Very nice.
ত্রিলোকেশ্বরের মন্দির। লোকে বলে স্বয়ং বিশ্বকর্মা তার ভিত-পত্তন করেছিলেন কোন্ মান্ধাতার আমলে, স্বয়ং হনুমান এনেছিলেন তার পাথর বহন করে। ইতিহাসের পণ্ডিত বলেন, এ মন্দির কিরাত জাতের গড়া, এ দেবতা কিরাতের। একদা যখন ক্ষত্রিয় রাজা জয় করলেন দেশ দেউলের আঙিনা পূজারিদের রক্তে গেল ভেসে, দেবতা রক্ষা পেলেন নতুন নামে নতুন পূজাবিধির আড়ালে- হাজার বৎসরের প্রাচীন ভক্তিধারার স্রোত গেল ফিরে। কিরাত আজ অস্পৃশ্য, এ মন্দিরে তার প্রবেশপথ লুপ্ত। কিরাত থাকে সমাজের বাইরে, নদীর পূর্বপারে তার পাড়া। সে ভক্ত, আজ তার মন্দির নেই, তার গান আছে। নিপুণ তার হাত, অভ্রান্ত তার দৃষ্টি। সে জানে কী করে পাথরের উপর পাথর বাঁধে, কী করে পিতলের উপর রুপোর ফুল তোলা যায় - কৃষ্ণশিলায় মূর্তি গড়বার ছন্দটা কী। রাজশাসন তার নয়, অস্ত্র তার নিয়েছে কেড়ে, বেশে বাসে ব্যবহারে সম্মানের চিহ্ন হতে সে বর্জিত, বঞ্চিত সে পুঁথির বিদ্যায়। ত্রিলোকেশ্বর মন্দিরের স্বর্ণচূড়া পশ্চিম দিগন্তে যায় দেখা, চিনতে পারে নিজেদেরই মনের আকল্প, বহু দূরের থেকে প্রণাম করে। কার্তিক পূর্ণিমা, পূজার উৎসব। মঞ্চের উপরে বাজছে বাঁশি মৃদঙ্গ করতাল, মাঠ জুড়ে কানাতের পর কানাত, মাঝে মাঝে উঠেছে ধ্বজা। পথের দুই ধারে ব্যাপারীদের পসরা - পুনশ্চ তামার পাত্র, রুপোর অলংকার, দেবমূর্তির পট, রেশমের কাপড়; ছেলেদের খেলার জন্যে কাঠের ডমরু, মাটির পুতুল, পাতার বাঁশি; অর্ঘ্যের উপকরণ, ফল মালা ধূপ বাতি, ঘড়া ঘড়া তীর্থবারি। বাজিকর তারস্বরে প্রলাপবাক্যে দেখাচ্ছে বাজি, কথক পড়ছে রামায়ণকথা। উজ্জ্বলবেশে সশস্ত্র প্রহরী ঘুরে বেড়ায় ঘোড়ায় চড়ে; রাজ-অমাত্য হাতির উপর হাওদায়, সম্মুখে বেজে চলেছে শিঙা। কিংখাবে ঢাকা পাল্কিতে ধনীঘরের গৃহিণী, আগে পিছে কিংকরের দল। সন্ন্যাসীর ভিড় পঞ্চবটের তলায় - নগ্ন, জটাধারী, ছাইমাখা; মেয়েরা পায়ের কাছে ভোগ রেখে যায় - ফল, দুধ, মিষ্টান্ন, ঘি, আতপতণ্ডুল। থেকে থেকে আকাশে উঠছে চীৎকারধ্বনি ‘জয় ত্রিলোকেশ্বরের জয়'। কাল আসবে শুভলগ্নে রাজার প্রথম পূজা, স্বয়ং আসবেন মহারাজা রাজহস্তীতে চড়ে। তাঁর আগমন-পথের দুই ধারে সারি সারি কলার গাছে ফুলের মালা, মঙ্গলঘটে আম্রপল্লব। আর ক্ষণে ক্ষণে পথের ধুলায় সেচন করছে গন্ধবারি। শুক্লত্রয়োদশীর রাত। মন্দিরে প্রথম প্রহরের শঙ্খ ঘণ্টা ভেরী পটহ থেমেছে। আজ চাঁদের উপরে একটা ঘোলা আবরণ, জ্যোৎস্না আজ ঝাপসা - যেন মূর্ছার ঘোর লাগল। বাতাস রুদ্ধ - ধোঁয়া জমে আছে আকাশে, গাছপালাগুলো যেন শঙ্কায় আড়ষ্ট। কুকুর অকারণে আর্তনাদ করছে, ঘোড়াগুলো কান খাড়া করে উঠছে ডেকে কোন্ অলক্ষ্যের দিকে তাকিয়ে। হঠাৎ গম্ভীর ভীষণ শব্দ শোনা গেল মাটির নীচে - পাতালে দানবেরা যেন রণদামামা বাজিয়ে দিলে - গুরু-গুরু গুরু-গুরু। মন্দিরে শঙ্খ ঘণ্টা বাজতে লাগল প্রবল শব্দে। হাতি বাঁধা ছিল, তারা বন্ধন ছিঁড়ে গর্জন করতে করতে ছুটল চার দিকে যেন ঘূর্ণি-ঝড়ের মেঘ। তুফান উঠল মাটিতে - ছুটল উট মহিষ গোরু ছাগল ভেড়া ঊর্ধ্বশ্বাসে পালে পালে। হাজার হাজার দিশাহারা লোক আর্তস্বরে ছুটে বেড়ায় - চোখে তাদের ধাঁধা লাগে, আত্মপরের ভেদ হারিয়ে কে কাকে দেয় দ'লে। মাটি ফেটে ফেটে ওঠে ধোঁয়া, ওঠে গরম জল - ভীম-সরোবরের দিঘি বালির নীচে গেল শুষে। মন্দিরের চূড়ায় বাঁধা বড়ো ঘণ্টা দুলতে দুলতে বাজতে লাগল ঢং ঢং। আচম্কা ধ্বনি থামল একটা ভেঙে-পড়ার শব্দে। পৃথিবী যখন স্তব্ধ হল পূর্ণপ্রায় চাঁদ তখন হেলেছে পশ্চিমের দিকে। আকাশে উঠছে জ্বলে-ওঠা কানাতগুলোর ধোঁয়ার কুণ্ডলী, জ্যোৎস্নাকে যেন অজগর সাপে জড়িয়েছে। পরদিন আত্মীয়দের বিলাপে দিগ্বিদিক যখন শোকার্ত তখন রাজসৈনিকদল মন্দির ঘিরে দাঁড়ালো, পাছে অশুচিতার কারণ ঘটে। রাজমন্ত্রী এল, দৈবজ্ঞ এল, স্মার্ত পণ্ডিত এল। দেখলে বাহিরের প্রাচীর ধূলিসাৎ। দেবতার বেদীর উপরের ছাদ পড়েছে ভেঙে। পণ্ডিত বললে, সংস্কার করা চাই আগামী পূর্ণিমার পূর্বেই, নইলে দেবতা পরিহার করবেন তাঁর মূর্তিকে। রাজা বললেন, ‘সংস্কার করো। ' মন্ত্রী বললেন, ‘ওই কিরাতরা ছাড়া কে করবে পাথরের কাজ। ওদের দৃষ্টিকলুষ থেকে দেবতাকে রক্ষা করব কী উপায়ে, কী হবে মন্দিরসংস্কারে যদি মলিন হয় দেবতার অঙ্গমহিমা। ' কিরাতদলপতি মাধবকে রাজা আনলেন ডেকে। বৃদ্ধ মাধব, শুক্লকেশের উপর নির্মল সাদা চাদর জড়ানো - পরিধানে পীতধড়া, তাম্রবর্ণ দেহ কটি পর্যন্ত অনাবৃত, দুই চক্ষু সকরুণ নম্রতায় পূর্ণ। সাবধানে রাজার পায়ের কাছে রাখলে একমুঠো কুন্দফুল, প্রণাম করলে স্পর্শ বাঁচিয়ে। রাজা বললেন, ‘তোমরা না হলে দেবালয়-সংস্কার হয় না। ' ‘ আমাদের ‘পরে দেবতার ওই কৃপা' এই ব'লে দেবতার উদ্দেশে মাধব প্রণাম জানালে। নৃপতি নৃসিংহরায় বললেন, ‘চোখ বেঁধে কাজ করা চাই, দেবমূর্তির উপর দৃষ্টি না পড়ে। পারবে?' মাধব বললে, ‘অন্তরের দৃষ্টি দিয়ে কাজ করিয়ে নেবেন অন্তর্যামী। যতক্ষণ কাজ চলবে, চোখ খুলব না। ' বাহিরে কাজ করে কিরাতের দল, মন্দিরের ভিতরে কাজ করে মাধব, তার দুই চক্ষু পাকে পাকে কালো কাপড়ে বাঁধা। দিনরাত সে মন্দিরের বাহিরে যায় না - ধ্যান করে, গান গায়, আর তার আঙুল চলতে থাকে। মন্ত্রী এসে বলে, ‘ত্বরা করো, ত্বরা করো - বাতাস রুদ্ধ - ধোঁয়া জমে আছে আকাশে, গাছপালাগুলো যেন শঙ্কায় আড়ষ্ট অমাবস্যা পার হয়ে শুক্লপক্ষ এল আবার। অন্ধ মাধব আঙুলের স্পর্শ দিয়ে পাথরের সঙ্গে কথা কয়, পাথর তার সাড়া দিতে থাকে। কাছে দাঁড়িয়ে থাকে প্রহরী। পাছে মাধব চোখের বাঁধন খোলে। পণ্ডিত এসে বললে, ‘একাদশীর রাত্রে প্রথম পূজার শুভক্ষণ। কাজ কি শেষ হবে তার পূর্বে। ' মাধব প্রণাম করে বললে, ‘আমি কে যে উত্তর দেব। কৃপা যখন হবে সংবাদ পাঠাব যথাসময়ে, তার আগে এলে ব্যাঘাত হবে, বিলম্ব ঘটবে। ' ষষ্ঠী গেল, সপ্তমী পেরোল - মন্দিরের দ্বার দিয়ে চাঁদের আলো এসে পড়ে মাধবের শুক্লকেশে। সূর্য অস্ত গেল। পাণ্ডুর আকাশে একাদশীর চাঁদ। মাধব দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললে, ‘যাও প্রহরী, সংবাদ দিয়ে এসো গে মাধবের কাজ শেষ হল আজ। লগ্ন যেন বয়ে না যায়। ' প্রহরী গেল। মাধব খুলে ফেললে চোখের বন্ধন। মুক্ত দ্বার দিয়ে পড়েছে একাদশী-চাঁদের পূর্ণ আলো দেবমূর্তির উপরে। মাধব হাঁটু গেড়ে বসল দুই হাত জোড় করে, একদৃষ্টে চেয়ে রইল দেবতার মুখে, দুই চোখে বইল জলের ধারা। আজ হাজার বছরের ক্ষুধিত দেখা দেবতার সঙ্গে ভক্তের। রাজা প্রবেশ করলেন মন্দিরে। তখন মাধবের মাথা নত বেদীমূলে। রাজার তলোয়ারে মুহূর্তে ছিন্ন হল সেই মাথা। দেবতার পায়ে এই প্রথম পূজা, এই শেষ প্রণাম।
congrats koshik.... xellent work & composition
খুবই সুন্দর ।অসামান্য
fantastic recitation....... as well as direction........